রাতে ঘুমানোর আগে মেকআপ কেন পরিষ্কার করবেন?

সারাদিনের ঘোরাঘুরি, পার্টি, বিয়ের অনুষ্ঠান, অফিস ইত্যাদি কাজ শেষ করে রাতে বাসায় ফেরার পর মেকআপ পরিষ্কার করা খুবই ক্লান্তিকর। যতোই ক্লান্তিকর কাজ হোক না কেনও আপনি যদি ঘুমাতে যাওয়ার পূর্ব মুখের মেকাপ সঠিক ভাবে পরিষ্কার করে ঘুমান তবে মুখের ত্বক অবশ্যই ভালো থাকবে। কিন্তু যদি আলসেমি করে মুখের মেকআপ পরিষ্কার না করেন তবে আপনি নিজেই নিজের সৌন্দর্যের ১২ টা বাজাচ্ছেন। তাই আপনি যতোই ট্রিটমেন্ট করুন না কেনও এই কাজে ভুল করলে কোনভাবেই সৌন্দর্য ঠিক রাখা সম্ভব না। তো চলুন জেনে নেওয়া যাক ঘুমানোর আগে মেকআপ পরিষ্কার করার কি কি উপকারীতা রয়েছে-

ঘুমানোর পূর্বে মেকআপ পরিষ্কার করার উপকারিতা সমুহঃ

রাতে ঘুমানোর আগে মেকআপ কেন পরিষ্কার করবেন?

ত্বক পরিষ্কার ও অক্সিজেনেটেড থাকে,

প্রতিদিন সঠিক ভাবে মেকআপ পরিষ্কার করলে ত্বক রুক্ষ শুষ্ক হয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাবে। মেক-আপ পরিষ্কার মানে হলো সঠিকভাবে স্কিনের যত্ন নেওয়া এবং সাথে কোষে অক্সিজেন প্রদান করা। যদি মুখ পরিষ্কার করে না ঘুমান তবে সারা রাতে মুখের কোষ গুলো নিস্তেজ হয়ে পড়ে। এমন ভাবে যদি সকালে ঘুম থেকে উঠে বাইরে যাওয়ার পূর্বে পুনরায় মেকআপ করলে দিন-রাত ২৪ ঘন্টা এভাবে মেকাপ অবস্থায় থাকলে ত্বকের বাজে অবস্থা হয়ে যাবে। তাই প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে মুখ ক্লিন করে ঘুম পড়ুন।

প্রিম্যাচিউর এজিং রোধ করে,

মেকআপ আপনার সৌন্দর্য বাড়াতে সাহায্য করে এটা সত্যি কিন্তু মেকআপ অনেক সময় মুখে থাকলে তার ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে এটা হয়তো আপনি যানেন না। যাইহোক এখন অন্তত যেনে রাখা উচিৎ মেকআপে ক্ষতিকর উপাদান থাকে কিন্তু সেটা অল্প সময়ে ক্ষতি করে না। দীর্ঘ সময় লাগিয়ে রাখলে খারাপ ইফেক্ট শুরু করে। যেমন- ত্বকের পোরস গুলো বন্ধ হয়ে গিয়ে এজিং সাইন শুরু হতে পারে। তাই যাতে নতুন স্কিন সেল তৈরি হয় তার জন্য ঘুমানোর পূর্বে স্কিন পরিষ্কার করে ঘুমান। যা এজিং এর বিরুদ্ধে লড়াই করে।

ব্রণের বিরুদ্ধে লড়াই

মুখে ব্রন উঠলে আমরা ভয় পাই আঁতকে উঠি। দোষারোপ করি ব্যবহৃত নামি-দামি মেকআপ প্রোডাক্ট গুলোকে। কিন্তু একবারও ভাবি না ঘুমানোর পূর্বে কি আমরা মুখের মেকাপ পরিষ্কার করে ঘুমাই? প্রকৃতপক্ষে মেকআপের কিন্তু কোন দোষ না কারন মেকাপ তো আপনার মুখের দাগ লুকিয়ে সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলবে কিন্তু সেটা যদি অতিরিক্ত সময় লাগিয়ে রাখেন তবে তো সেটা বিপরীত মুখি কাজ করবে। তাই মুখে ব্রনের হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্য মুখ পরিষ্কার করে ঘুমানো আবশ্যক। মুখের ত্বক যদি সঠিক ভাবে অক্সিজেন পায় তবে অবশ্যই ব্রন হবে না। কিন্তু আপনি যদি ঘুমানোর সময় মেকাপ নিয়ে ঘুমান তবে ব্রন হবে এটাই স্বাভাবিক।

ডার্ক সার্কেল রুখে দেয়

চোখের সৌন্দর্যের জন্য আমরা আই মেকআপ ব্যবহার করে থাকি যাতে চোখের পাপড়ি কালো দেখায়। কিন্তু সেটা যদি পার্মানেন্ট হয়ে যায় তবে খুব বিশ্রী দেখাবে। তাই রাতে ঘুমানোর পূর্বে মেকআপ ভালোভাবে পরিষ্কার করে ঘুমালে চোখের ডার্ক সার্কেল হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়। তাই অনেক ক্ষন সময় নিয়ে আই মেকআপ এবং মাশকারা ধুয়ে ফেলুন। আর দেখুন কতটা ফ্রেশ লাগছে।

চোখের ইনফেকশন থেকে সুরক্ষা

মেক-আপ করলেই অবশ্যই চোখে কিছু না কিছু লাগাতে হবে। অনেক সময় হালকা বা বিভিন্ন কালারের শ্যাডো ব্যবহার করা হয়। ঘুমানোর পূর্বে যদি চোখের মেকআপ পরিষ্কার না করা হয় তবে চোঁখে ইনফেকশন হতে পারে। আবার এমন হয় চোঁখের উপর যে উপাদান গুলো ব্যবহার করা হয় সেগুলো যদি চোঁখে যায় তবে চোখের মধ্যে লাল হয়ে যেতে পারে। এমন কি চোঁখে চুলকানি হতে পারে। তাই চোখের ইনফেকশন থেকে রক্ষা পাবার জন্য অবশ্যই মেকাপ পরিষ্কার করা উচিৎ।

ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে

আপনি হয়তো ভাবতে পারেন মেকাপ করলে পরিষ্কার দেখায় কিন্তু মেকআপ ধুলে কেমনে ত্বক উজ্জ্বল হবে। হ্যা হবে আপনি হয়তো যানেন না মেকআপে এমন উপাদান রয়েছে যা ত্বকের ময়লা কাটতে সাহায্য করে। তাই ঘুমানোর আগে মুখের মেকাপ ধুলে ত্বকের ময়রা বা, দাগ ধুয়ে যাবে। তার সাথে সাথে ঘুমানো অবস্থায় ত্বকে সঠিকভাবে অক্সিজেন এবং নিউট্রিশন প্রবেশ করবে।

দুর্বল ও ভঙ্গুর আইল্যাশের সম্ভাবনা কমে যাওয়া

আমরা প্রতিনিয়ত চোখ আকর্ষণীয় দেখানোর জন্য মাশকারা ব্যবহার করি। সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য মাশকারা ব্যবহার করাটা খারাপ না। কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় তখন যখন আপনি চোখের মেকআপ না ধুয়েই ঘুমিয়ে পড়েন। বার বার এমন চোখের মেকআপ পরিষ্কার না করে ঘুম পড়লে ডিহাইড্রেশন বৃদ্ধি পায় যার ফলে চোখের হেয়ার ফলিকন দুর্বল হয়ে পড়ে। আর ফলশ্রুতিতে সময়ের সাথে সাথে পাপড়ি দুর্বল হয়ে ভেঙ্গে যেতে পারে। এই রকম সমস্যার সম্মুখীন হতে না চাইলে অবশ্যই ঘুমাতে যাওয়ার পূর্ব মাশকারা পরিষ্কার করে নিতে হবে।


ঠোঁট রুক্ষতা থেকে রক্ষা

ঠোঁট রুক্ষতা থেকে রক্ষা

মেক-আপ মানেই ঠোটে লিপস্টিক দিতেই হবে৷ ঠোঁটে লিপস্টিক দিলে ঠোঁটের সৌন্দর্য কয়েক গুন বেড়ে যায়। সৌন্দর্যের পাশাপাশি ঠোঁট পরিপাটি রাখার জন্য লিপস্টিক ছাড়াও প্রাকৃতিক ভাবে ঠোঁট সুন্দর রাখা উচিৎ। ঠোঁট পরিপাটি রাখার জন্য রাতে ঘুমানোর পূর্বে ঠোটে ব্যবহারিত লিপস্টিক ধুয়ে নিতে হবে। যদি না ধোয়া হয় তবে লিপস্টিক শুকিয়ে ময়েশ্চারাইজ হারাবে এমনকি দেখে মনে হবে চামড়া উঠে যাচ্ছে। ঠোঁট পরিষ্কার করে ঘুমাচ্ছেন অর্থাৎ ঠোঁটকে প্রাকৃতিক ভাবে ময়েশ্চারাইজড এবং কোমল থাকতে হেল্প করছেন।

রিংকেল পড়ার সম্ভবনা কমে

যদি মেক-আপ পরিষ্কার করে ঘুমানো না হয় তবে ত্বকের ইলাস্টিসিটি কমে যেতে থাকে, যার দরুন সেল রিজেনারেট হ্রাস পায়। যা অল্প সময়েই দেখা দিতে পারে রিংকেলস। এই প্রবলেমএর সম্মুখীন হতে না চাইলে ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে মেকআপ পরিষ্কার করে ঘুমান। এতে কিছুদিনের মধ্যে মুখে হাত দিলে সফট ভাব বুঝতে পারবেন।

স্কিন অ্যালার্জি থেকে মুক্তি

অতিরিক্ত সময় ধরে মেকআপ লাগিয়ে রাখলে স্কিনে অ্যালার্জি সমস্যা দেখা দেয়। যদি আপনি রেগুলার মুখ পরিষ্কার রাখেন তবে এই অ্যালার্জি আপনার ধারে কাছে আসবে না। মনে রাখবেন মেকআপ পরিষ্কার না করে ঘুমালে ডার্মাটিটিস বা একজিমার মতো ভয়ানক সমস্যা দেখা দিতে পারে।

পরের দিনের রুটিন ইজি হয়

ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে যদি মেকআপ পরিষ্কার করেন অর্থাৎ ফেসিয়াল কেয়ার সঠিকভাবে নেন তবে ঘুম থেকে উঠে মানে পরের দিন বিউটি রুটিন শুরু করা ইজি হয়। কারন ঘুম থেকে নেক্সট দিন যদি পরিষ্কার ত্বক নিয়ে ওঠেন তবে দিনের প্রথম থেকেই টোনিং, ক্লেনজিং, ময়েশ্চারাইজিং সাথে নতুন করে মেক-আপ এর রুটিন অল এভ্রিথিং সুন্দর ভাবে শুরু করা সম্ভব হয়।

হায় বন্ধু আপনি কি সেই ব্যক্তি যিনি প্রতি রাতে মেকআপ পরিষ্কার না করেই ঘুমাচ্ছেন? এই প্রশ্নের উত্তর যদি হ্যাঁ হয় তবে এই খারাপ অভ্যাস পরিবর্তন করে ফেলুন এক্ষুনি। আর মনে রাখবেন শুধুমাত্র ফেইস ওয়াশ দিয়ে কখনোই মেকআপ পরিষ্কার করবেন না। ভালো মানের মাইসেলার ওয়টার, ক্লেনজিং অয়েল বা, বাম দিয়ে ভালো করে মেকআপ পরিষ্কার করে তুলে নিন। তারপর ভালো করে ফেইস ওয়াশ দিয়ে ধুয়ে টোনার ও ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। অবশ্যই নিজের ত্বকের যত্ন নিন সুস্থ ও সুন্দর থাকার চেষ্টা করুন।

ধন্যবাদ!!!

Post a Comment

Previous Post Next Post