চুলের সমস্যার সমাধান হবে নিমেষেই! ব্যবহার করুন অ্যাপেল সিডার ভিনেগার
কেমন আছেন প্রিয় পাঠকবৃন্দ। আপনাদের অনেকেই কল্পনা করেন যে এমন একটা জাদুর উপাদান থাকতো যেটা ব্যবহার করলে চুলের বা, ত্বকের যে কোনো সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। তো তাদের কে বলছি এই প্রকার উপাদান কিন্তু রয়েছে যা চুলের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করবে। তো সেই কাল্পনিক জাদুকরী উপাদানটির নাম হলো 'অ্যাপেল সিডার ভিনেগার'। যদিও অনেকেই আগে থেকে এই উপাদানটি সম্পর্কে জানেন যে এটি ওজন কমানোর ক্ষেত্রে কার্যকরী কিন্তু এটি সেল্ফ কেয়ারেও অনেক বেশি কার্যকরী। অ্যাপেল সিডার ভিনেগার চুলের যত্নে কেন ব্যবহার করবেন, কিভাবে ব্যবহার করবেন, কোন কোন বিষয়ে খেয়াল রাখা উচিৎ, এই সব প্রশ্নের সমাধান নিয়ে আলোচনা করবো আজকের এই লেখাটিতে।
অ্যাপেল সিডার ভিনেগার চুলের যত্নে কতটুকু উপকারী?
শক্তিশালী প্রাকৃতিক উপাদান গুলোর মধ্যে অ্যাপেল সিডার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটিতে যেসব গুরুত্বপূর্ণ উপাদান গুলো রয়েছে সেগুলো হলো ১) অ্যাসিটিক এসিড ২) সাইট্রিক এসিড ও ৩) ম্যালিক এসিড। এগুলো পিএইচ লেবেল কে ঠিক রাখে। আর চুলের পুষ্টির জন্য পিএইচ লেভেল ঠিক থাকা খুবই জরুরি। স্ক্যাল্পের পিএইচ লেভেল রিস্টোর এবং ব্যালেন্স করতে অ্যাপেল সিডার ভিনেগার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে থাকে। তো প্রথমেই জেনে নেওয়া যাক অ্যাপেল সিডার ভিনেগারের বেনিফিট গুলো কী কী রয়েছে।
১) Anti Microbial Property
অ্যাপেল সিডার ভিনেগারে রয়েছে Anti Fungal, Anti Bacterial & Anti Inflammatory Properties যেগুলো স্ক্যাল্পের বিভিন্ন ক্ষতিকর জীবানুর বিরুদ্ধে কাজ করে। আর এই ক্ষতিকর জীবাণু গুলো চুল ঝরে যাওয়ার অন্যতম কারণ।
২) Low পিএইচ
অ্যাপেল সিডার ভিনেগার তৈরি হয় Fruit Vinegar & Acetic Acid এর সমন্বয়ে। যেগুলো স্ক্যাল্পের PH Level এর ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং লো পিএইচ এর মাত্রা ঠিক করে ভারসাম্য রক্ষা করে।
৩) ক্ষত নির্মুল
ক্ষত অর্থাৎ বিভিন্ন প্রকার ক্ষতিকর জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হয়ে স্ক্যাল্পে অর্থাৎ মাথার চামড়ার উপর বিভিন্ন রকম ক্ষত সৃষ্টি হয়। এই ক্ষত গুলো ঠিক হতে অ্যাপেল সিডার ভিনেগার এর তুলনা নেই।
৪) পরিস্কারক
অ্যাপেল সিডার ভিনেগার চুল বা, মাথার বিশেষ পরিস্কারক হিসাবে কাজ করে। স্ক্যাল্পের অতিরিক্ত অয়েল, জীবাণু এবং ডেড স্কিন দুর করে পরিস্কার করে দিতে অনেক বড়ো ভুমিকা রাখে।
যেভাবে ব্যবহার করবেন?
বিভিন্ন ভাবে অ্যাপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করা যায়। তার মধ্যে কিছু প্রসেস জেনে নেওয়া যাক-
১) অ্যাপেল সিডার ভিনেগারের সাথে পানি
যা যা প্রয়োজন
- ২-৩ চামচ অ্যাপেল সিডার ভিনেগার
- ১ কাপ পরিমাণ পানি
- ১ টি ছোট স্প্রে বোতল
প্রয়োজনীয় জিনিস গুলো হাতে পাওয়ার পর যেভাবে ব্যবহার করবেন
স্প্রে বোতলের মধ্যে ১কাপ পরিমাণ পানি দিয়ে তার মধ্যেও ২-৩ চামচ অ্যাপেল সিডার ভিনেগার ঢেলে খুব ভালোভাবে মিক্স করুন। তারপর ভালো করে সম্পুর্ণ মাথায় স্প্রে করুন। অয়েলি অর্থাৎ তেল তেলে চুলে সপ্তাহে ১ বার ব্যবহার করুন আর চুল যদি ড্রাই হয় তবে মাসে ১/২ বার ব্যবহার করুন আর যদি চুল নর্মাল হয় তবে ২ সপ্তাহে ১ বার ব্যবহার করতে পারেন।
প্রি শ্যাম্পু ট্রিটমেন্ট হিসেবে অর্থাৎ শ্যাম্পু করার পূর্বের ট্রিটমেন্ট
শ্যাম্পু করার মিনিমাম ১ ঘন্টা আগে অ্যাপেল সিডার ভিনেগার ভালোভাবে মিসিয়ে চুলে ও স্ক্যাল্পে স্প্রে করুন। তারপর মাথায় হাত দিয়ে আলতো ভাবে ৫-১০ মিনিট ম্যাসেজ করুন এবং অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলুন।
কন্ডিশনার হিসেবে ব্যবহার করুন
চুলে শ্যাম্পু করার পর কন্ডিশনার ব্যবহার করার মতো করে অ্যাপেল সিডার ভিনেগার চুলে ভালো করে স্প্রে করুন এবং ম্যাসেজ করে সব জায়গায় লাগিয়ে নিন। তারপর ৫-৭ মিনিট অপেক্ষা করে ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। অ্যাপেল সিডার ভিনেগার এর মিশ্রণ ব্যবহার করলে আলাদা করে কন্ডিশনার ব্যবহার করার কোন প্রয়োজন নেই। এটি লাগালে এমনিতেই চুল হবে সফট এবং শাইনি।
২) অ্যালোভেরা জেল এর সাথে অ্যাপেল সিডার ভিনেগার
যা যা প্রয়োজন
- ৩-৪ চামচ অ্যাপেল সিডার ভিনেগার
- ১ চামচ অ্যালোভেরা জেল
- ১ টি বোতল
এ গুলো হাতে পাওয়ার পর যেভাবে ব্যবহার করবেন
বোতল টিতে ৩-৪ চামচ অ্যাপেল সিডার ভিনেগার ঢালুন তার মধ্যে ১ চামচ অ্যালোভেরা জেল দিন তারপর ভালোমতো ঝাকিয়ে নিন। লক্ষ রাখবেন মিশ্রণটি যেন খুব বেশি ঘন না হয়। মিশ্রণ টি হয়ে গেলে শ্যাম্পু করা চুলে ভালো করে লাগিয়ে নিন শুধু চলে নয় মাথার স্ক্যাল্পেও ব্যবহার করুন। এরপর ৪-৫ মিনিট অপেক্ষা করে ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
চুলে ময়েশ্চার প্রদান করে অ্যালোভেরা জেল তাই এই ভাবে চুলের যত্ন নিলে চুল সিল্কি ও হেলদি হয়।
৩) অ্যাপেল সিডার ভিনেগার এর সাথে অ্যাসেনশিয়াল অয়েল মিক্স
যা যা প্রয়োজন
- ৩/৪ কাপ পানি
- ৩/৪ কাপ অ্যাপেল সিডার ভিনেগার
- ৩ ফোঁটা রোজমেরি অ্যাসেনশিয়াল তেল
- ১ টি স্প্রে বোতল
এই প্রয়োজনীয় উপাদান গুলো হাতে পাওয়ার পর যেভাবে ব্যবহার করবেন
উপরের সবগুলো উপাদান সঠিক ভাবে মেপে নিয় একটি বোতলে ঢেলে মিক্স করুন। মেশানোর পর ভালোভাবে চুলে ও মাথার স্ক্যাল্পে ব্যবহার করুন। তারপর ৩-৪ মিনিট অপেক্ষা করে ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
অ্যাপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহারের ক্ষেত্রে যে বিষয় গুলো মাথায় রাখা জরুরিঃ
১) এই সিরাপ টি ব্যবহার এর ক্ষেত্রে পরিমাণ সঠিক রাখা খুবই জরুরি। চুলের লেন্থ ও ঘনত্ব অনুসারে এর পরিমান ঠিক করতে হবে।
২) কালার করা চুলে অ্যাপেল সিডার ভিনেগার ইউজ করা থেকে দুরে থাকুন। কারন এতে থাতা এসিড চুলে লাগানো কালার হালকা করে দেয়।
৩) চোঁখে কোনভাবে যেন এই সিরাপটি না লাগে এটি শুধুমাত্র চুলে ও মাথার স্ক্যাল্পে লাগাবেন।
৪) ঠিক যেমন অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো না তেমনি অ্যাপেল সিডার ভিনেগার অতিরিক্ত ব্যবহার করা উচিৎ নয়।
৫) কখনোই নর্মাল ব্রান্ডের অ্যাপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করবেন না। অবশ্যই কেনার সময় QR কোড চেক করে নিন।
সেলফ কেয়ারের ক্ষেত্রে অ্যাপেল সিডার ভিনেগার ভিশনই কার্যকরী এবং রয়েছে দারুণ স্বাস্থ্য উপকারিতা। তো এই লেখাতে যানতে পারলাম অ্যাপেল সিডার ভিনেগার এর ব্যবহার এর সঠিক কৌশল সমুহ। আশাকরি আজকের এই লেখাটি আপনাদের অ্যাপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার এর সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে পারলাম। যদি লেখাটি ভালো লেগে থাকে তবে অবশ্যই কমেন করে জানাবেন। ধন্যবাদ!!!
Post a Comment