গর্ভাবস্থায় ঘুমানোর সঠিক উপায় কী?
একজন মানুষ সুস্থভাবে বেচে থাকর জন্য সারাদিনের কাজের পর রাতের বেলা ঘুম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারন সারাদিন কর্মব্যস্ত থাকার পর রাতে শরীরের প্রতিটা পার্ট বিশ্রাম চায়। আর এই বিশ্রাম যদি না পায় তবে পরের দিন কোনভাবে কোন কাজে মননিবেশ করতে পারে না। এমনকি শরীর অসুস্থ হয়ে পড়ে। প্রত্যেক পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তি সুস্থভাবে বেচে থাকার জন্য মিনিমাম ৬-৭ ঘন্টা ঘুম আবশ্যক। আর এই ঘুম যদি ফ্রেশ ভাবে না হয় তবে শরীর ক্লান্ত, মেজাজ খারাপ, কাজে অমনোযোগ প্রতিটি ক্ষেত্রেই বিরক্তর সৃষ্টি হয়। আর যদি একজন প্রেগন্যান্ট মহিলার ঘুমের সমস্যা হয় তবে মা এবং গর্ভজাত সন্তান দুজনেই ভিশন ক্ষতি হয়। তো এই প্রেগ্ন্যান্ট মায়ের মধ্যে শিশুর আগমন নিয়ে ভিশন উত্তেজনা বা, দুশ্চিন্ত চলতে থাকে। যার ফলে ঘুমের মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটে। এমনকি অনেক মা জানেন না কোন পজিশনে শুলে তার সঠিক ঘুম আসবে এবং বেবি ও সুস্থ থাকবে।
তাই আজকে আমি আপনাদের সাথে আলোচনা করতে চলেছি একজন প্রেগন্যান্ট মহিলার ঘুমানোর সঠিক পজিশন অর্থাৎ কোন পজিশনে শুলে মায়ের ভালো ঘুম হবে এবং বেবিও সুস্থ থাকবে। তো প্রথমেই জেনে নেওয়া যাক,
প্রেগন্যান্সিতে ফ্রেশ ঘুম না হওয়া কারনঃ
- প্রেগন্যান্ট অবস্থায় প্রতিনিয়ত হরমোন পরিবর্তন হওয়ার কারনে ঘুম ব্যাঘাত ঘটে
- পা য়ে ক্রমাগত ব্যাথার জন্য ঘুমের প্রবলেম ঘটতে পারে
- বার বার প্রস্রাব আসার ফলে ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে
- মাঝে মধ্যে বমি আসা বা বমি হওয়ার কারনে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে
- ব্যাক পেইন এর ফলে শুতে অসুবিধা হয়া তাতে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে
- গর্ভাবস্থায় ঠিক মতো খেতে না পারর কারনে বার বার ক্ষুধা লাগে এ কারনেও ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে
- অ্যাসিডিটি বা বুকে জ্বালাপোড়া করার কারনে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে
- প্রেগন্যান্সির শেষ মুহুর্তের দিকে ব্রেস্ট অর্থাৎ বুক স্ফীত ঘটে যার কারনে ঘুমের সমস্যা হয়
এ ছাড়াও বিভিন্ন জনের বিভিন্ন রকমের সমস্যার কারনে ঘুম হয় না। ঘুম না হওয়ার হাজার টা কারন থাকা সত্বেও কিছু পজিশন অনুসরণ করে শুলে অবশ্যই ঘুম তাড়াতাড়ি আসার সম্ভাবনা থাকে। আর যদি শুয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘুম এসে যায় তবে হাজার টা কারন থাকলেও ঘুম পড়া অসম্ভব নয়। তাই এবার আলোচনা করা যাক,
গর্ভাবস্থায় ঘুমানোর সঠিক পজিশন সমূহ নিয়েঃ
১) প্রেগন্যান্ট মহিলার কখনও চিৎ হয়ে অর্থাৎ পেট উপরের দিকে শোয়া উচিৎ নয়। যদি আপনি চিৎ হয়ে ঘুমান তবে শরীরের সবথেকে বড় শিরা অর্থাৎ ইনফেরিওর ভেনাকাভাতে ভিশন চাপ সৃষ্টি হয় যার ফলে হৃদযন্ত্রে কম রক্ত প্রবেশ করে। ফলশ্রুতিতে হৃদপিণ্ড থেকে ব্লাড কম বের হয়। সেই মহুর্তে মায়ের শরীরের রক্তচাপ কমে যায় ফলে প্ল্যাসেন্টাতে রক্ত আসা যাওয়া বাধা পড়ে। এতে গর্ভের বাচ্চার শরীরে অক্সিজেনের সল্পতা হওয়ার ঝুকি বেড়ে যায়।
২) স্লিপ অ্যাপনিয়া ও অ্যাজমা রয়েছে এমন মহিলার নিজের শরীর এবং শিশুর শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেন সরবরাহ করতে প্রবলেম হয়। যেসব মহিলার এই প্রকার সমস্যা রয়েছে তারা যদি চিৎ হয়ে ঘুমায় তবে তাদের রক্তপ্রবাহ কমে যাওয়া সমস্যা যুক্ত হবে। যার ফলে উভয় প্রবলেম পরস্পরকে অধিক খারাপ অবস্থায় নিয়ে যাবে।
৩) গর্ভাবস্থায় একজন নারী ডান পাশ অথবা বাম পাশ উভয় দিকে কাত হয়ে ঘুমাতে পারে। এতে কোন সমস্যা নেই। গর্ভবতী মা যে দিকেই আরাম অনুভব করবে সেদিকেই কাত হয়ে ঘুমাতে পারবে।
৪) গর্ভকালীন সময়ে মায়েদের বা দিকে কাত হয়ে শুতে বলা হয়। কারন এতে লেভারের উপর শরীরের অতিরিক্ত ওজন থেকে সেইভ থাকবে।
৫) মা বাম দিকে কাত হয়ে শুলের শরীরে রক্ত চলাচল সহজ হয়। অর্থাৎ মায়ের শরীরে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকলে শিশু সঠিক মাত্রায় রক্ত ও অক্সিজেন পায়।
৬) প্রেগন্যান্ট অবস্থায় কখনও উপুর অর্থাৎ উপরের দিকে মুখ করে শোয়া মোটেও উচিৎ নয়। যদি উপুর হয়ে শোয়া হয় তবে মায়ের পাকস্থলী এবং প্রসারিত জরায়ুর উপর অধিক চাপ সৃষ্টি করে। এতে খাবার পরিপাকে কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হয়।
৭) যদি আপনি প্রেগন্যান্ট অবস্থায় উপুড় হয়ে ঘুমান তবে আপনার বাবুর নড়াচড়ার ব্যাঘাত সৃষ্টি হয় এমন কি মাতার শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
গর্ভকালীন সময়ে ভালো ঘুমের জন্য কিছু টিপসঃ
একজন গর্ভবতী মহিলা বা মা কে মিনিমাম ৮ থেকে ১০ ঘন্টা ঘুমানোর জন্য বলা হয়ে থাকে। সেটা দিনে ২ ঘন্টা আর রাতে ৮ ঘন্টা করে ভাগ করে নিতে হবে। এমন ভাবে ঘুম গর্ভের বাবুর ব্রেইন গঠনে সহায়তা করে এমন কি বাবুর শারিরীক গঠনেও মাতার ঘুম ভিশন জরুরি। তাই গর্ভবতী মাতার শোবার জায়গা হবে আরামদায়ক, কোলাহল মুক্ত, মৃদু আলো সাথে প্রাকৃতিক হাওয়া চলাচল করতে পারে এমন জায়গা। প্রেগন্যান্ট মুহুর্তে ফ্রেশ ঘুম আনার জন্য বেশ কিছু টিপস রয়েছে আপনাদের জন্য-
- একজন গর্ভবতী মাতার নরম, সুতির ঢিলেঢালা অর্থাৎ আরামদায়ক পোশাক পরা উচিৎ
- খাওয়ার পর পর অর্থাৎ সাথে সাথে ঘুমানো উচিৎ নয়
- ঘুমাতে যাওয়ার পূর্ব মুহূর্তে কখনো চ-কফি বা, ক্যাফেইন জাতীয় খাবার গ্রহণ করা উচিৎ নয়
- প্রতিদিন ঘুমানোর মিনিমাম ১ ঘন্টা আগে ১ গ্লাস দুধ পান করা উচিৎ এতে বাচ্চার যদি পুষ্টির ঘাটতি থাকে তা পূরণ হতে সাহায্য করে
- রেগুলার সর্বনিম্ন আধাঘন্টা হাঁটাচলা অর্থাৎ হালকা ব্যায়াম করুন তাহলে সঠিক সময়ে ঘুম আসতে সাহায্য করবে। (কোনভাবেই ভারি ব্যাম করতে যাবেন না)
- আপনি যদি ফোন, কম্পিউটার ইত্যাদি ডিভাইস গুলো ব্যবহার করেন তাহলে ঘুমাতে যাওয়ার ১ ঘন্টা আগে এগুলোকে দুরে রেখে দিন
- এমতাবস্থায় আরামদায়ক বালিশ ব্যবহার করুন যেখানে যেমন প্রয়োজন অনুভব করেন
- কাত হয়ে শুয়ে পায়ের মধ্যে ও পিঠের পিছনে বালিশ রাখলে পা এবং কোমরের ব্যাথা থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে
তো এই টিপস গুলো সঠিকভাবে ফলো করে চললে একজন মায়ের পরিপূর্ণ ও ফ্রেশ ঘুম হওয়া সম্ভব। সর্বদা চেষ্টা করুন ঘুম পড়ার এতে আপনার অনাগত শিশুর শরীর ও ব্রেইন বিকাশে সহায়তা করবে। যদি মা সুস্থ থাকে তবে সন্তান অবশ্যই সুস্থ হয়ে জন্ম নেয়। জন্ম থেকে কোন শিশু অসুস্থ বা অপুষ্টিত হয়ে জন্ম নেয় তাহলে জন্মানোর পর সেই ঘাড়তি কোন ভাবেই পুরন হতে চায় না। তাই আপনার বাবু আপনার মধ্যে থাকা অবস্থাতেই পুষ্টিত করে তুলুন।
ধন্যবাদ!!!
sleeping position during pregnancy,how to sleep during pregnancy,sleeping position in pregnancy,how to sleep in pregnancy,pregnancy sleeping positions, গর্ভাবস্থায় ঘুমানোর পদ্ধতি
Thanks for tips
ReplyDeletePost a Comment