খাবারের টেবিল থেকে শুরু করে চায়ের দোকান গাড়ি-ঘোড়া, অফিস-আদালত, গণমাধ্যম ও খবরের কাগজ তো বটেই, বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে যে নামটি তিনি সদ্য সাবেক প্রতিমন্ত্রী ডাক্তার মুরাদ হাসান।সব হারিয়ে লোকটি এখন বিদেশে ঘুরছে কোথাও মিলছে না ঠাই। 

অথচ তার টাকা পয়সার কোন অভাব নাই। মুরাদ হাসান যখন প্রথমবার সংসদ নির্বাচনে দাঁড়ালেন চিকিৎসা পেশা থেকে তিনি বার্ষিক আয় দেখিয়েছিলেন তিন লাখ টাকার সামান্য বেশি। ১০ বছর পরে সেটা বেড়ে হয় ১৪ লাখ যার বেশির ভাগ আসে ব্যবসা থেকে। জানা গেছে জনপ্রতিনিধি হওয়ার পর চিকিৎসক মুরাদ হাসান চাকরির চেয়ে ব্যবসা করে বেশি অর্থ উপার্জন করেছেন।

১০ বছরে টাকা গহনা ও পুরনো গাড়ির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দামি গাড়ি, বেড়েছে জমির পরিমাণ ও বসতবাড়ির সংখ্যা। এছাড়া নিজ নামে যতটা না সম্পদ করেছেন এর চেয়ে বেশি গড়েছেন স্ত্রীর নামে।তবে স্ত্রীর প্রায় সব সম্পত্তি দান থেকে পাওয়া বলে ভাস্য মুরাদের।

দুই নির্বাচনের হলফনামায় মুরাদ নিজের পেশার ঘরে লিখেছেন চিকিৎসা। 2008 সালের হলফনামা অনুসারে মুরাদ হাসান এর হাতে নগদ ২ লখা ২২ হাজার ২১৩ টাকা ছিল। সঞ্চয় পত্র বা স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ ছিল ৫৪ হাজার ৯২১ টাকা। 

১০ বছর পর তিনি যখন আবার নির্বাচন করতে চান তখন হাতের নগদ টাকার কোন হিসাব দেননি। তবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ২১ লাখ ২৭ হাজার টাকা সঞ্চয় এবং শেয়ারে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা বিনিয়োগ। সঞ্চয়পত্র বা স্থায়ী আমানতে ১ লাখ ৩৭ হাজার ২৩১ টাকা বিনিয়োগ দেখিয়েছেন।

প্রথমবারের হলফনামায় মুরাদের কোন গহনা ছিল না। তবে 2018 সালের হলফনামায় তার নামে ২৫ ভরি স্বর্ণ থাকার তথ্য দেওয়া হয়েছে। এর দাম দেখানো হয়েছে আড়াই লাখ টাকা। এছাড়া পুরনো গাড়ির সঙ্গে দামি আরেকটি গাড়ি যুক্ত হয়েছে।

2008 সালে মুরাদের ৮ লাখ টাকা দামের একটি টয়োটা মাইক্রোবাস ছিল কিন্তু ১০ বছর পর সেই গাড়ির সঙ্গে যুক্ত হয় ৭০ লাখ টাকার একটি নতুন কার।

প্রথম বার তার বাসায় ৪০ হাজার টাকার টিভি ও ফ্রিজ বাসায় থাকলেও ১০ বছর পর তার বাসায় ৮০ হাজার টাকার টিভি ও ফ্রিজ এবং লাখ টাকা দামের ল্যাপটপ ছিল। আর আসবাবপত্র ছিল আড়াই লাখ টাকার। এর বাহিরে তিন লাখ টাকার পিস্তল ও শটগানের মালিক তিনি। যা ১০ বছর আগে ছিল না।

এর বাইরে জমি বিক্রি থেকে ২০ লাখ, পুঁজি হিসেবে দেওয়া ৬ লাখ, এবং ঋণ হিসাবে দেওয়া ১৫ লাক টাকার হিসাবও তিনি 2018 সালের হলফনামায় দিয়েছেন। মুরাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী 2008 সালের নির্বাচন করার সময় তিনি ছিলেন ১৫ লাখ ২০ হাজার টাকা মূল্যমানের ৭.২০ শতাংশ অকৃষি জমির মালিক। কোন কৃষি জমি বাড়ি ফ্লাট বা, প্লট সে সময় ছিলনা।

কিন্তু 2018 সালের হলফনামায় তিনি নিজের নামের সরিষাবাড়ী দৌলতপুরে ১০ বিঘা কৃষিজমি এবং দুই কাঠা ও ১.২ বিঘা অকৃষি জমি দেখিয়েছেন এগুলো অধিকার সূত্রে পাওয়া মুরাদের ভাস্য মতে। আর ঢাকার পূর্বা চলে ৫ কাঠা জমি থাকার  বিষয়ে জানিয়েছেন যার প্রকৃত দাম ৩৫ লাখ ২৭ হাজার ৯৫০ টাকা।

2008 সালে তিনি আয় দেখান ৩ লাখ ৯ হাজার ৬০০ টাকা যার পুরোটাই চাকরি থেকে এসেছে। আর কোন খাত থেকে কোনো আয় তার ছিল না। কিন্তু 2018 সালের হলফনামায় তার বাৎষরিক আয় বৃদ্ধি হয় ১৩ লাখ ৮৩ হাজার ২৯৩ টাকা। তার প্রকৃত পেশার জায়গায় কোন রকম পরিবর্তন করা হয়নি, তবে চাকরি অর্থাৎ ডাক্তারী থেকে আয়ের বিষয় কিছু দেখানো হয় নি।

চাকরির ছাড়া বিজনেস থেকে বৎষরে ১২ লাখ টাকা। এবং বাড়ি ভাড়া থেকে ১ লাখ ২৩ হাজার ২৯৩ টাকা এবং কৃষি থেকে ৬০ হাজার টাকা আয় দেখানো হয় সেখানে।

2008 সালের নির্বাচনের মুরাদের হলফনামায় স্ত্রী ও নির্ভরশীলদের সম্পদের ঘরগুলো ছিল শুন্য। স্ত্রীর নামে সে সময় কেবল বিয়েতে উপহার হিসেবে পাওয়া ২৫ ভরি স্বর্ণালংকার এর কথা উল্লেখ ছিল। যার মূল্য দেখানো হয়েছে দুই লাখ ৪০ হাজার টাকা।

পরে ১০ বছরে মুরাদ হাসান এর নিজস্ব সম্পদ যে পরিমান বেড়েছে তার চেয়ে বেশি বেড়েছে স্ত্রী ডাক্তার জাহানারা এহেসানের সম্পদের পরিমাণ। 2018 সালের হলফনামায় মুরাদ স্ত্রীর নামে ১৫০ ভরি গহনা তথ্য দিয়েছেন। যেখানে উৎস হিসেবে দেখিয়েছেন পত্রিক সূত্রে পাওয়া। 2008 সালে জাহানারা এসান এর কোনো সঞ্চয় বা, বিনিয়োগ ছিল না। 2018 সালে হলফনামার ওই ঘরে ৪০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র থাকা তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রথম দফায় পাঁচ বছর এমপি থেকে এবং পরের পাঁচ বছর ব্যবসা-বাণিজ্য করে একটি বাড়ির মালিক হতে পারেননি মুরাদ। তবে এই সময়ে তার স্ত্রীর নামে পুরান পল্টনের ছয় তলা একটি বাড়ি হয়েছে। বেইলি হাইটসে একটি ফ্ল্যাট হয়েছে। এছাড়া মুরাদের ওপর নির্ভরশীলদের একজন শান্তিনগরে কর্কট টুইন টাওয়ারের একটি ফ্ল্যাটের মালিক হয়েছেন। এর সবই দান থেকে পাওয়া বলে ভাষ্য মুরাদের। 

জানা গেছে মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে এবার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ খতিয়ে দেখছে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক। এরই মধ্যে সম্পদের বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা শুরু হয়েছে। প্রাথমিকভাবে সংগৃহীত তথ্য উপাত্ত কমিশন বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে। এরপর কমিশনের অনুমোদনক্রমে এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। সুষ্ঠু ও সঠিকভাবে তদন্ত করা হলে মুরাদ হাসান তার সম্পদের কোন হিসাব দিতে পারবে না বলে ধারণা বিশ্লেষকদের।

আপনি কি মনে করেন মুরাদ হাসান ও তার স্ত্রী মাত্র দশ বছরে এত সম্পদের মালিক হলো কিভাবে? কমেন্ট করে জানিয়ে দিন আপনার মতে সম্ভাব্য সোর্সের কথা।

Post a Comment

Previous Post Next Post