প্রবাদ আছে সকাল বেলার রাজা রে তুই ফকির সন্ধ্যা বেলা। সেই কথাটি যেন আমাদের সাবেক প্রতিমন্ত্রী মুরাদর জীবনে ঘটে গেছে। জাস্ট দিন কয়েক আগেই তার কতই না ক্ষমতা ছিল এটা করব, সেটা করব কত কথাই না আমরা তার মুখ থেকে শুনেছি। আর এখন সেই মানুষটি কি না কোথাও মাথাগোঁজার ঠাঁই পাচ্ছেন না। 

এ সব কিছুই হয়তো সাবেক মন্ত্রী মশাইয়ের কর্মফল অর্থাৎ পাপের সাজা। আর অবশ্যই সবই আল্লাহতায়ালার ইচ্ছা। আল্লাহ যাকে চান সম্রাজ্য দান করেন। আবার যার কাছ থেকে যান সাম্রাজ্যকে কেড়ে নেন। যাকে চান সম্মান দান করেন। আবার যাকে চান অপমানিত করেন।

যে মুরাদ হাসান কিছুদিন আগে বাংলাদেশ থেকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম কে মুছে দিতে চেয়েছিলেন। যে লোকটি আলেম-ওলামাদের পিটিয়ে সোজা করার কথা বলেছিলেন। যে মানুষটি আল্লামা সাঈদী সাহেবকে কারাগারে বসে খাওয়ানোর বিপক্ষে মন্তব্য করেছিলেন। যে লোকটি লন্ডনে গিয়ে তার বিরোধীদলীয় নেতাদের মেরে আসতে চেয়েছিলেন সেই লোকটিকে কিনা কেউ কোথাও জায়গা দিচ্ছেনা। টানা কয়েকদিন নানা বিমানবন্দরে ঘুরেফিরে কোথাও জায়গা না পেয়ে অবশেষে আবার বাংলাদেশে ফেরত আসতে হচ্ছে।

কূটনৈতিক পাসপোর্ট নিয়েও কানাডায় প্রবেশ করতে পারেননি মুরাদ হাসান। আরব আমিরাতের একটি ফ্লাইটে স্থানীয় সময় 10 ডিসেম্বর দুপুর 1:31 মিনিটে টরন্টো পিয়ার্সন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের পর তাকে দীর্ঘ সময় ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করে কানাডা ইমিগ্রেশন এবং বর্ডার সার্ভিসের কর্মকর্তারা।

এরপর তাকে বিমানবন্দর থেকেই ফেরত পাঠান তারা। গত সেপ্টেম্বরে কানাডায় গিয়েছিলেন মুরাদ হাসান। অথচ তিন মাসের ব্যবধানে ঘটনার চিত্র পাল্টে গেল। যে কানাডায় তার অসংখ্য বন্ধু বান্ধব, আত্মীয় স্বজন ও ব্যাবসায়ী পার্টনার রয়েছে সেই কানাডায় কেন তার জায়গা হল না চিন্তা করে দেখুন তো।

তবে এই ঘটনার পেছনে লুকিয়ে থেকে কেউ না কেউ তো এ কাজ টি করেছে তারা কারা হতে পারে, কিভাবেই বা মুরাদ হাসান এর কানাডায় প্রবেশ করা আটকে দিল?

চলুন এ বিষয়ে কিছু তথ্য জানার চেষ্টা করি। জানা গেছে কানাডায় যাতে মুরাদকে ঢুকতে দেওয়া না হয় সেজন্য প্রবাসীদের একটি অংশ সক্রিয় ছিল আগে থেকেই।

প্রবাসীদের বেশ কয়েকটি সংগঠন এ নিয়ে কাজ করছিল। তাদের মধ্যে অন্যতম লুটেরা বিরোধী মঞ্চ। সংগঠনটির সংগঠক ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি গবেষক মঞ্জুরে খোদা টরিক এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে বলেন কানাডায় সবকিছুই খুব নিয়মতান্ত্রিক অনিয়মের দেখা মিলবে না এদেশে।

তিনি বলেন মুরাদ হাসানের আসার খবরে আমরা এখানে কানাডার বর্ডার সার্ভিসেস ওয়েবসাইটে গিয়ে ইমেইল করি। বাংলাদেশের মুরাদ হাসানের অপকর্মের কথা বিস্তারিত লিখি এবং এর মধ্যে বিভিন্ন সংবাদ ও মুরাদের ভিডিও ক্লিপ জুড়ে দেই। শুনেছি আমাদের মত এমন 171 ইমেইল না কি গেছে এজেন্সিতে। এখানে কর্মরত দুই বাংলাদেশী সাংবাদিক এ তথ্য জানিয়েছে আমাদের। আমাদের বিশ্বাস এসব ইমেইল কে গুরুত্ব দিয়ে দেখেছেন কানাডার প্রশাসনক বিভাগ।

অবশ্য ঢাকায় কানাডীয় হাইকমিশনারের পাওয়া তথ্য বলছে ভিন্ন কথা। এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে যেসব কাগজপত্র থাকা প্রয়োজন ছিল তা না থাকায় মুরাদ হাসানকে বিমানবন্দরে আটকে দেয়া হয়। মুরাদকে টরেন্টো বিমানবন্দরে আটকে দেওয়ার বিষয়ে কানাডার বর্ডার সার্ভিসেস এখনো কিছু জানায়নি বলে তথ্য দিয়েছেন কানাডায় অবস্থিত বাংলাদেশের হাইকমিশনার খলিলুর রহমান।

তিনি গণমাধ্যমকে বলেন কানাডার বর্ডার সার্ভিস এজেন্সির সঙ্গে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ থাকে। যদি বাংলাদেশের কোনো নাগরিককে কানাডায় প্রবেশে তারা বাধা দেয় অর্থাৎ যে কোন ব্যাপারে কোন ঝামেলা হলে তারা আমাদের অবশ্য জানায় কিন্তু মুরাদ এর বিষয়ে আমাদের তেমন কোন কিছু জানায়নি।

কানাডায় মুরাদ হাসান কে ঢুকতে দেয়া হয়নি তথ্য নিশ্চিত করে কানাডা থেকে প্রকাশিত বাংলা ভাষার নিউজ পোর্টাল তাদের প্রতিবেদনে লিখেছিলো, সংসদ সদস্য ডাক্তার মুরাদ হাসান কে কানাডায় ঢুকতে দেয়নি দেশের বর্ডার সার্ভিসেস এজেন্সি।

টরেন্টো পিয়ার্সন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয় বলে জানা গেছে। কানাডায় বসবাস রত তার ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্র ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন। তবে কানাডার সরকারি সূত্র থেকে এ ব্যাপারে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।

এরইমধ্যে গুঞ্জন ওঠে মুরাদ হাসান মন্ট্রিয়লে তার এক আত্মীয়ের বাসায় উঠেছেন। পরে জানা যায় কানাডায় ঢুকতে না পেরে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ঢোকার চেষ্টা করেন সেখানেও ব্যর্থ হয়ে এখন ঢাকায় ফেরার চেষ্টা করেন।

এরই মধ্যে ডাক্তার মুরাদ দুবাই থেকে 12 তারিখ সকাল 7 টা 56 মিনিটের ফ্লাইটে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের বিমান এ দেশে ফিরেছেন এমন খবরের হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকরা ভোর থেকে ভিড় করেন। কিন্তু বিমানবন্দরের একটি সূত্র নিশ্চিত করে বলেন নির্ধারিত বিমানটি ল্যান্ড করলেও এ ফ্লাইটে ডাক্তার মুরাদ হাসান আসেননি।

এ সময় তাকে রুখে দিতে বেশ কিছু মানুষকে বিক্ষোভ করতেও দেখা যায়। সবশেষ তথ্যমতে রাতের মধ্যেই ঢাকায় ফিরবেন মুরাদ হাসান। কথা হল মুরাদ হাসানের এই পরিণতি থেকে অন্যরা শিক্ষা নেবে তো। ইসলামের বিপক্ষে আলেম-ওলামাদের বিপক্ষে নারীদের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে তিনি যে রাজা থেকে প্রজারও নিচে নেমে গেলেন এটা বাকি ক্ষমতাসীনরা অনুভব করছেন তো। 

ক্ষমতার দাপট চিরস্থায়ী নয় আল্লাহ ছাড় দেন তবে ছেড়ে দেন না। এ বিষয়টা বাকিরা উপলব্ধি করতে পারলে আলহামদুলিল্লাহ না পারলে তাদেরও ধ্বংস অনিবার্য।

Post a Comment

Previous Post Next Post